ওসমানী জাদুঘরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:
ওসমানী জাদুঘর, সিলেট। প্রতিষ্ঠাকাল: ৪ মার্চ ১৯৮৪ খ্রি. ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি (সি.ইন.সি.) ছিলেন বঙ্গবীর জেনারেল মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী। চিরকুমার বঙ্গবীর ওসমানী ১৬ ফেব্রæয়ারি ১৯৮৪ সালে মৃত্যুর পর সিলেটে ‘নূর মঞ্জিল’ পৈত্রিক সম্পত্তি নামে বাড়িটি তাঁরই নামে ‘ওসমানী জাদুঘর’ নামকরণ করা হয়। বঙ্গবীর ওসমানীর মৃত্যুর পর মূলত: এ বাড়িটি তালাবদ্ধ থাকত। জাদুঘরটি টিপ-টপ, সবুজ-সজীব, ঝকঝকে, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন, শান্ত, সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে নগরীর নাইওরপুর এলাকায় টিন শেডের চার চালা একটি ঐতিহাসিক বাংলো বাড়ি। সিলেট নগরীর ধোপাদিঘীর পূর্বপাড় লাগুয়া নাইওরপুল এলাকার এই বাড়িটির নাম ‘নূর মঞ্জিল’। ‘নূর মঞ্জিল’ ছিলো ওসমানীর গর্বিনী মাতা জোবেদা খাতুনের সম্পত্তি। সম্মুখ ও পিছন ভাগে রয়েছে প্রশস্ত খালি জায়গা। ভবনের সামনে ও পিছন দিকে অনেক ফলজসহ নানা জাতের গাছ-গাছালি এবং বিভিন্ন ধরণের ফুলের গাছ রয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক ড: এনামুল হক এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ এর প্রচেষ্টায় সিলেট শহরের নাইওরপুলস্থ মহল্ল¬ায় প্রায় ২ বিঘা জমির উপর স্থাপিত হয় ‘ওসমানী জাদুঘর’। জাদুঘরের তিনটি গ্যালারীতে সুবিন্যস্তভাবে সাজিয়ে রাখা আছে জেনারেল ওসমানী ব্যবহৃত বেশ কিছু দুর্লভ নিদর্শন সামগ্রী। বঙ্গবীর ওসমানী স্মৃতি বিজড়িত দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত প্রতিটি নিদর্শন সামগ্রী দর্শকদের মুগ্ধ করে। ব্যক্তিগত জীবনে ওসমানী যে কত সহজ সরল সাধারণ জীবন যাপন করতেন তা জাদুঘর পরিদর্শন না করলে জানা যাবে না। ওসমানী জাদুঘর মূলত: ছোট এবং নিদর্শন সামগ্রী সাধারণ মানের হলেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। বাগান বেষ্টিত বাংলো ধাচের টিনসেড বাড়ি। গাছগাছালি ঘেরা এর উঠোনে পাতার ফাঁক গলে পড়া রোদের ছটা মুক্তোর মত জ্বলজ্বল করে সকালে। বিকেলে এ উঠোন ঘিরেই দেখা যায় অন্য এক আলো আধাঁরির খেলা। কাছে গেলে যে কাউকে তা আকর্ষণ করবে অনায়াসে।
ওসমানী জাদুঘর রূপান্তরের ইতিহাস :
বঙ্গবীর জেনারেল মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী জীবদ্দশায় ১৯৭৬ সালের মে মাসে মা-বাবার স্মৃতি রক্ষার্থে ‘দি জুবেদা খাতুনÑখান বাহাদুর মফিজুর রহমান ট্রাস্ট’ গঠণ করেন। ওসমানীর পৈত্রিক সম্পত্তির সবকিছুই এ ট্রাস্টে দান করে গেছেন। তাঁর মৃত্যুর পর সম্পত্তিটি ‘দি জুবেদা খাতুন খান বাহাদুর মফিজুর রহমান’ নামে ট্রাষ্টি বোর্ড দ্বারা পরিচালিত হয়। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয়ভাবে ওসমানী ট্রাষ্ট্রি বোর্ড গঠণ করা হয়। ঐ ট্রাষ্টি বোর্ডের কাছ থেকে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ১৯৮৫ সালে ১৬ ফেব্রæয়ারি তৎকালীন সরকার ওসমানী জাদুঘরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে ওসমানীর অবদান, আজীবন দেশপ্রেমের স্বীকৃতি এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে নুর মঞ্জিলকে জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠাকল্পে ট্রাষ্টের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে ওসমানীর ইচ্ছাকে বাস্তবায়নের জন্য এককালীন ৫(পাঁচ) লক্ষ টাকার বিনিময়ে নাইওরপুল এলাকায় “নুর মঞ্জিল” বাড়িটি ৯৯ বছরের জন্য ইজারা গ্রহণ করে। ওসমানী জাদুঘর প্রতিষ্ঠা এবং উন্নয়ন বাবদ সরকার এককালীন ১৩ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। লীজ গ্রহণ শেষে ১৯৮৬ সালে ২২ আগস্ট সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ সিলেটের তাঁর পৈত্রিক নিবাস ‘নূর-মঞ্জিল’ ভবনটিকে অতি সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে জাদুঘর রূপান্তর করণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করে ওসমানীর বাস ভবনটি ‘ওসমানী জাদুঘর’ এ রূপান্তর করে। জাদুঘরটি ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা মার্চ এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এবং সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর থেকে ওসমানী জাদুঘর সুষ্ঠু এবং সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। এই বঙ্গবীরের ব্যবহৃত নানা প্রকার নিদর্শন উপস্থাপনার মাঝে এই জাদুঘরের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে।
১৬ ফেব্রæয়ারি ১৯৮৫ সালে তৎকালীন সরকার(মরহুম হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ) মহান মুক্তিযুদ্ধে ওসমানীর অবদান, আজীবন দেশপ্রেমের স্বীকৃতি এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে নুর মঞ্জিলকে জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠাকল্পে ট্রাষ্টের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে ওসমানীর ইচ্ছাকে বাস্তবায়নের জন্য কিছু শর্তসাপেক্ষে ৯৯ বছর দীর্ঘমেয়াদি বাড়িটি লীজ গ্রহন করে।
ওসমানী জাদুঘর প্রতিষ্ঠা:
বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর মহানায়ক বঙ্গবীর জেনারেল মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর জীবন সম্পর্কিত নিদর্শন, মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ সেবায় তাঁর গৌরবময় অবদান ও স্বীকৃতি জাতির সামনে তুলে ধরতে কর্মময়, সামাজিক, রাজনৈতিক স্মৃতি বিজড়িত নিদর্শন সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধ তথা জাতীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখতে ওসমানী জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের এটি একটি শাখা জাদুঘর। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ওসমানী জাদুঘরের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এই বঙ্গবীরের ব্যবহৃত নানা প্রকার নিদর্শন উপস্থাপনার মাঝে এই জাদুঘরের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এটি বাংলাদেশের প্রথম স্মৃতি জাদুঘর। বাংলাদেশের কৃতি সন্তানদের শ্রদ্ধার দৃষ্টান্ত।
ওসমানী জাদুঘর দর্শকদের জন্য সময়সূচি: (১) গ্যালারী সময়সূচি: জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর শনিবার থেকে বুধবার সকাল ১০:৩০ মিনিট থেকে বিকাল ৫:৩০ মিনিট। শুক্রবার- বিকাল ৩:০০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৮:০০ টা পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার (সাপ্তাহিক ছুটি) এবং অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন জাদুঘর বন্ধ থাকে।
স্কুল প্রোগ্রাম: ওসমানী জাদুঘর হতে সিলেট শহরের বিভিন্ন স্কুল/কলেজের ছাত্র/ছাত্রীদের বিনা টিকিটে জাদুঘর পরিদর্শনের জন্য পত্র প্রদান করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেমন: ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, ২১শে ফেব্রæয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, ২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস, ১লা বৈশাখ ও ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে ছাত্র/ছাত্রী, প্রতিবন্ধী, সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের বিনা টিকিটে জাদুঘর পরিদর্শনের সুযোগ দেয়া হয়। স্কুল/কলেজ/ বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের ছাত্র/ছাত্রী জাদুঘর বিনা টিকিটে পরিদর্শনের সময় তাদের নিজস্ব প্যাডে ছাত্র/ছাত্রীর সংখ্যা উল্লেখপূর্বক সহকারী কীপার, ওসমানী জাদুঘর, সিলেট বরাবর আবেদন করে বিনা টিকিটে জাদুঘর পরিদর্শনের সুযোগ দেয়া হয়।
জাদুঘরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান: মহান মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার-ইন-চীফ বঙ্গবীর জেনারেল এমএজি ওসমানী জাদুঘরে বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে শিশু-কিশোরদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান সরকারিভাবে পালন করে থাকে।
বিভিন্ন জাতীয় ও বিশেষ দিবস পালন/উদযাপন উপলক্ষে শিশু-কিশোরদের চিত্রাংকন/রচনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। প্রতিটি অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণকারী প্রতিযোগীদের অনুষ্ঠান শেষে বিচারক মন্ডলী দ্বারা প্রত্যেক বিভাগ থেকে ৩(তিন) জন বিজয়ী বাছাইপূর্বক তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে আকর্ষণীয় পুরস্কার ও সনদ প্রদান করা হয়ে থাকে। সাধারণ দর্শক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আগত শিক্ষার্থীকে জাদুঘর পরিদর্শনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরা হয়।
ভূ’মির পরিমাণ : ১.৬৬ বিঘা যার গড় দৈর্ঘ্য (উত্তর-দক্ষিণ) ২০৩.৫ ফু”ট এবং প্রস্থ (পূর্ব-পশ্চিম) ১১৮ ফুট। ভবন বাদে ভূমির পরিমাণ ১.৪৭ বিঘা প্রায়। মোট ৫৪ শতক জায়গা এবং ওসমানী জাদুঘর ভবনের আয়তন ২,৪০২ বর্গফুট।