ওসমানী জাদুঘরে গ্যালারী সমূহ:
১। ১ নম্বর গ্যালারি : গ্যালারীতে রয়েছে শেখ আফজাল অংকিত জেনারেল ওসমানীর পূর্ণ প্রতিকৃতি। একটি খাট ও কাঠের টি-টেবিল। টেবিলের উপর বঙ্গবীর ওসমানীর ব্যবহৃত নানা ধরনের সাধারণ পোষাক-পরিচ্ছদ, সেনাবাহিনীর উর্দি, পত্র-পত্রিকা, সাময়িকী, দেশী-বিদেশী জার্নাল, বিভিন্ন লেখকের গ্রন্থ, বেতের চেয়ার, কাঠের আলমারি, বইয়ের শোকেস, আলনা, সামরিক ছড়ি, টেলিফোন সেট, শার্ট-প্যান্ট, সুয়েটার, বালিশ, তোয়ালে, পাঞ্জাবী ব্রীফকেস, জামা, জুতা, চীনা মাটির বাসন, চামচ, ছুরি, কাঠের নৌকা, ফ্লাক্স, ছাতা।
আলোকচিত্র: ছোট বেলায় পিতার কোলে ওসমানী, যৌবনে সামরিক বাহিনীর অফিসার হিসেবে জেনারেল ওসমানী, সামরিক পোষাকে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট ওসমানী, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জেনারেল ওসমানীর ছবি ইত্যাদি সুন্দর করে উপস্থাপন করা হয়েছে।
২। ২ নম্বর গ্যালারী: ওসমানীর ব্যবহৃত মনোগ্রাম, পদক, ব্যাজ, শোল্ডার ব্যাজ, টুপীর ব্যাজ, বুকের ব্যাজ, ভুজারী, তরবারী, পাসপোর্ট, স্বাধীনতা পুরস্কার, সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বেতের সোফাসেট এই কক্ষটি তিনি তাঁর বৈঠকখানা হিসেবে ব্যবহার করতেন। এখানে তারই ব্যবহার্য্য কিছু আসবারপত্র প্রদর্শিত হচ্ছে।
আলোকচিত্র: ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সেবাবাহিনীর গার্ড-অব-অনার গ্রহণরত জেনারেল ওসমানী, সিলেট বিমানবন্দরে বাংলাদেশের বিমান বাহিনীর বিমান থেকে অবতরণরত মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ও সহকর্মীদের সঙ্গে জেনারেল ওসমানী, রাষ্ট্রপরি আবু সাঈদ চৌধুরীর সাথে ওসমানী, জেনারেল জিয়াউর রহমানের সাথে ওসমানী, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধকালীন যশোহরের হানাদার বাহিনী মুক্ত অঞ্চল পরিদর্শনরত জেনারেল ওসমানী।
পেইন্টিং: রনাঙ্গণে যুদ্ধের পরিকল্পনা ও কৌশল সম্পর্কে সেক্টর কমান্ডারদের নির্দেশ দানরত জেনারেল ওসমানী, রনাঙ্গণে যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রণাঙ্গন ও মুক্তাঞ্চাল পরিদর্শনে জেনারেল ওসমানী, ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এ পাক বাহিনীর আত্মসমার্পন দৃশ্যের পিছনে ও মুক্তিযোদ্ধা ও জনতা, ভারতে অবস্থিত শরণার্থী শিবিরে অবস্থানরত নর-নারী ও শিশুদের করুন অবস্থা, ২৫ মার্চ ১৯৭১ কালো রাত্রি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হল সমূহে পাক বাহিনীর গণহত্যা ইত্যাদি ওসমানী জাদুঘরের গ্যালারীতে প্রদর্শিত হয়েছে।
৩। ৩ নম্বর গ্যালারী: বঙ্গবীর ওসমানীর ব্যবহৃত একটি ছোট খাট, যে খাটে তিনি শুতেন। খাবার টেবিল, জায়নামাজ, বিভিন্ন ধরনের মানপত্র, চীনামাটির তৈরী প্লেট হাফ-প্লেট, কারিডিস, রেফ্রিজারেটর, মুক্তিযুদ্ধকালীন অপারেশনের ম্যাপ, বিভিন্ন ধরনের সাময়িকী, জেনারেল ওসমানী ব্যবহৃত টেবিল ও চেয়ার।
আলোকচিত্র: এডমিরাল এম এ খানের পাশে ওসমানী, হযরত শাহজালাল (রা:) এর মাজার জিয়ারতে জেনারেল ওসমানী, দেওয়ান ফরিদ গাজী ও মেজর চিত্তরঞ্জন দত্তের সাথে জেনারেল ওসমানী, স্বত:স্ফুর্ত জনতার মাঝে জেনারেল ওসমানী, ১৯৭২ সালে সিলেটের একটি এলাকায় জনগনের আন্তরিক অভিনন্দন গ্রহণ করছেন জেনারেল ওসমানী, ১৯৭২ সালের গোড়ার দিকে প্রথমবারের মত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সিলেট বিমান বন্দরে জেনারেল ওসমানী সিলেটের জনগণের পাশে ভাষণরত ওসমানী অর্থ্যাৎ বিভিন্ন আলোকচিত্রের মাঝে ওসমানী নামক মহাপুরুষটিকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
পরির্দশন বহি: ভিআইপি সম্মানিত অতিথিদের জন্য ভিজিটর বুক রয়েছে এবং সাধারণ দর্শকদের জন্য ভিজিটর রেজিষ্টার রয়েছে। এখানে সম্মানিত অতিথি ও দর্শকবৃন্দ জাদুঘর পরিদর্শন শেষে মনের ভাব প্রকাশের জন্য ভিজিটর বুকে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত লিখে মন্তব্য করে থাকে।
মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী সংক্ষিপ্ত জীবনী : বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এই অসাধারণ মানুষটির জন্ম ভাটি বাংলার অঞ্চল তৎকালীন সুনামগঞ্জ মহকুমা শহরে তাঁর পিতার কর্মস্থল (বর্তমানে সুনামগঞ্জ জেলা) ১৯১৮ সালে ১লা সেপ্টেম্বর মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী তৎকালীন সুনামগঞ্জ মহকুমায় বর্তমানে সুনামগঞ্জ জেলার জন্ম গ্রহণ করেন। ওসমানীর জন্মের প্রাক্কালে ১৯১৮ সালে খান বাহাদুর মফিজুর রহমান তৎকালীন আসামের সুনামগঞ্জ সদর মহকুমায় সাব-ডিভিশনাল অফিসার হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। সুনামগঞ্জ সদরে ওসমানীর বাবা মা ভাই বোন তাঁদের বসবাস ছিল। এখানেই ওসমানীর জন্ম হয়। বর্তমানে দয়ামীর গ্রাম একই নামের ইউনিয়নভূক্ত এবং নবগঠিত ওসমানীনগর উপজেলার অন্তর্ভূক্ত। ওসমানীর পৈতৃক নিবাস বর্তমান সিলেট জেলার ওসমানীনগর থানার (সাবেক বালাগঞ্জ থানার) দয়ামীর গ্রামে।
খান বাহাদুর মফিজুর রহমানের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট ছেলে ওসমানী। তাঁদের প্রথম সন্তানের নাম মুহম্মদ নূরুল গণি ছিলেন তাঁর চেয়ে বয়সে এগারো বছরের বড়ো। প্রথম সন্তানের জন্মের ৩ বছর পর তাঁদের দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয়। দ্বিতীয় সন্তানের নাম সদরুন্নেসা এবং ডাক নাম মাজান। দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের ৮ বছর পর তাঁদের তৃতীয় সন্তানের জন্ম হয়। ওসমানী ছিলেন সবচেয়ে ছোট। ফলে শিশু ওসমানী বেড়ে উঠেন একাকী। পিতা মাতার এই তৃতীয় সন্তানই হলেন ওসমানী এবং ভাই বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ থাকায় বাল্যকালে ওসমানীকে পরিবারের সবাই আদর করে ‘আতা’ বলে ডাকতেন। পরবর্তীকালে তিনি সকলের কাছে আতা নামেই পরিচিত ছিলেন। বর্তমানে তাদের পরিবারের সকলেই, লোকান্তরিত।
ব্যক্তি জীবন: ধার্মিক, সাদাসিদে, নিরহঙ্কারী, মিতব্যয়ী, জনদরদী ও সত্যশ্রয়ী, আপোষহীন, অমায়িক ও আন্তরিক, খাঁটি নির্ভেজাল, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, সৎ, নির্লোভ, নিষ্ঠাবান, পরোপকারী, স্পষ্টভাষী, স্বাধীনচেতা এবং খাঁটি দেশপ্রেমিক।
অন্যান্য গুণাবলী: বৈবাহিক অবস্থা: চিরকুমার, লেখাপাড়ায়: অসাধারণ মেধাবী, শ্রেষ্ঠ অবদান: মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, পারদর্শী: ইংরেজীতে, রাশি: কন্যা, দৃষ্টান্ত স্থাপন: সময়ানুবর্তীতার, নীতির প্রশ্নে আপোষহীন।
বঙ্গবীর ওসমানীর ব্যক্তিগত স্মৃতিস্মারক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শন সংগ্রহ অভিযান:
ওসমানী জাদুঘরের নিদর্শন সংগ্রহ ভান্ডারকে সম্মৃদ্ধ করার লক্ষ্যে বঙ্গবীর ওসমানীর ব্যবহৃত যে কোন স্মারক দ্রব্য, তাঁকে কেন্দ্র করে কোন প্রকাশনা, চিঠি পত্র, ডকুমেন্ট এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্মারক ইত্যাদি সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব জাতীয় সম্পদ ব্যক্তিগত ভাবে বিবেচনায় না দেখে জাতীয় প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণ, গবেষণা ও প্রদর্শনের জন্য জমা দেয়ার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ব্যক্তি সাধারণ, প্রকাশক, গবেষণা ও সংগ্রাহকদের নি¤েœর ঠিকানায় যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। প্রয়োজনে ওসমানী জাদুঘর (উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন স্বাপেক্ষে) উপযুক্ত মূল্যে ক্রয়/উপহার হিসেবে গ্রহণ করতে সর্বদা প্রস্তত রয়েছে।